গল্পপাঠ ǁ কার্তিক ১৪২৩ সংখ্যা। । অক্টোবর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ।। সংখ্যা ৪৭
এই কার্তিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আবার অমানবিক হামলা ঘটেছে যা নিয়ে সাধারণ মানুষ ভয়াবহ আতংকে দিন কাটাচ্ছে। দেশভাগের পর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা একটি অনিরাময়যোগ্য গভীর অসুখে পরিণত হয়েছে। গল্পপাঠ এ বিষয়টি নিয়ে তাই এ সংখ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনার আয়োজন করেছে।
এই উন্মাদের উপত্যকা,কসাইয়ের উপত্যকা কারুর দেশ না। হিন্দুর না,মুসলমানের না,বৌদ্ধের না,খ্রিস্টানের না,মালাউনের না। গভীর অসুখের এই রাতে বাংলাদেশে শুভবুদ্ধির কোনও যুবক-যুবতী ঘুমোবেননা। হাঁক দিয়ে তারা জেগে থাকবেন রাতের পর রাত…।
গভীর অসুখের এই রাতে বাংলাদেশে শুভবুদ্ধির কোনও যুবক-যুবতী ঘুমোবেননা।
কার্তিক সংখ্যায় বিশেষ আয়োজন হিসেবে আছে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কয়েকজন লেখকের সাক্ষাৎকার। একজন লেখক অসাম্প্রদায়িক হতে পারেন? লেখকের অসাম্প্রদায়িক হওয়া কতটা জরুরী? মৌসুমী কাদেরের এ আয়োজনে এমন প্রাসঙ্গিক সব প্রশ্ন উঠে এসেছে।
জোতিরিন্দ্র নন্দী ভিন্ন ধারার গল্পকার। তাঁর গল্পে সবসময় একটা আদিম, প্রাকৃতিক গন্ধ পাওয়া যায়। নগরজীবনে শিল্প সংস্কৃতির অভাববোধ থেকে তিনি রচনা করেছিলেন “বনের রাজা” গল্পটি। ড: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “শ্রেষ্ঠ লেখক:শ্রেষ্ঠ গল্প” বইয়ে তাঁর এ গল্পটি স্থান পেয়েছে এবং সমালোচকরাও তাঁর এ গল্পটিকে শ্রেষ্ঠ গল্পের মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু জোতিরিন্দ্র নন্দী লিখিত “আমার সাহিত্য জীবন” নামক নিবন্ধে এ গল্পটি সম্পর্কে কোন উচ্ছসিত আলোচনা করেন নি। শুধু বলেছিলেন ” শিশুকালে নিত্য যার সঙ্গে প্রত্যুষে বেড়াতে বেরোতাম, সেই আমার দীর্ঘায়ু লোভী ঠাকুরর্দার গায়ের পাকা আমের গন্ধের মতো নিবিড মদির গন্ধ ও কুমিল্লর হেলিডির বাংলোর গোলাপের টাটকা গন্ধ মিলেমিশে গিয়ে আমার কলম থেকে একদিন ‘বনের রাজা’ বেরিয়ে এলো। পাঠক পডুন–


মান্না দের গানের অমলের মতোই এক কবি তুহীন বোস, ক্ষয়িষ্নু জমিদার পরিবারের বংশধর। সবভাই যখন তার পূর্ব পুরুষের সম্পত্তির ভোগদখলে ব্যস্ত, তখন সে কবিতা আর নেশায় বুঁদ হয়ে জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে। তুহিন বোসের মৃত্যুর পর তাকে দাহ করা হয় জমিদার বাড়ীর নিজস্ব শ্মশানে। পরে জমিদার বাডীতে শোকসভার আয়োজন করে তার ভাইরা, উদ্দেশ্য তার কবিতা বিক্রি করে প্রকাশকের কাছ অর্থপ্রাপ্তি । জমিদার বংশধরদের কাছে তুহিন বোসের চেয়ে বিখ্যাত তাদের আরেক বংশধর মিস রুপোলী, ক্যাবারে ড্যান্সার। মুলত এমন একটি ক্রমবিলীন জমিদার পরিবারের গল্প বলেছেন শ্যামল গঙ্গ্যোপাধ্যায় তার নির্মোহ ভঙ্গিতে।


ডাক বিভাগের গল্প
মানুষের সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশের সাথে ডাকের সম্পর্ক নিবিড়। ডাকের উন্মেষকাল থেকে এর নিষ্ঠা,সততা ছিলো সমীহ করার মতো। বিশ্ব সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় এ সার্ভিসটির গুণাগুণ তুলে ধরা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যও এর বাইরে নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন মায়া মমতায় জড়ানো তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘পোষ্টমাষ্টার’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডাক হরকরা’ গল্পটি ডাক কর্মচারীর নৈতিক মূল্যবোধের কারণে পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছিলো। সুকান্তের ‘রানার’ কবিতায় তারাশঙ্করের গল্পের কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। কিন্তু প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি গল্পে সেসময়ে ডাকের নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরা হয়েছে যা ডাকের ঐতিহ্যের সাথে ঠিক খাপ খায় না। পাঠক পড়ে দেখতে পারেন গল্প দুটি। সাথে থাকলো ডাকের বিষয় আশয় নিয়ে লেখা কুলদা রায় আর মোমিনুল আজমের দুটি গল্প।

এই গল্পটি আমাদের চেনা। রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার। তিনি চাকরির সুবাদে বাড়ি ছেলে দূরদেশে চাকরি করতে এসেছেন। সেখানে একা থাকেন। একটি মেয়ে তার কাজ করে দেয়। মেয়েটির নাম রতন। নাসরিন জাহানের এই গল্পটির মেয়েটির নাম নেই। রতনকে তার মা পাঠিয়েছে এই মধ্য বয়ষ্ক লোকটির কাছে ঘরের কাজ করে দিতে। তার নিজেরও একটি মেয়ে আছে এই মেয়েটির বয়সী।
এরপরে যা ঘটেছিল সেটা রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার গল্পে ঘটেনি। অন্যত্র দেখি। একা পেয়ে কাজের মেয়েকে গৃহস্বামী রেপ করে। টাকার বিনিময়ে ভোগ করে। কোনো কোনো গল্পে একটা প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। প্রেমে ফেলতে আমাদের লেখকদের বিপুল আগ্রহ। এই থিম নিয়ে বহু গল্প লেখা হয়ে, হচ্ছে। কিন্তু এই চেনা গল্পটিকেই নাসরিন জাহান অচেনা করে দেন। পাঠককে নিয়ে যান একটি মৌলিক গল্পের দিকে।
পাঠক হিসেবে বুঝতে পারি আমরা রবীন্দ্রনাথের পোস্ট মাস্টারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, ও হেনরির শেষ পাতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যাচ্ছি ইডিপাসের হাত ধরে যেতে যেতে নাসরিন জাহানের মুখোশের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। এ মুখোশটি তাঁর নিজের হাতে সৃজিত।

শারদীয়া বা ঈদ সংখ্যায় যেসব উপন্যাস বা গল্প থাকে সেগুলো সাধারণত সম্পাদকের চাহিদামোতাবেক একটা হালকা চালের হয়ে থাকে। সেদিক থেকে অমর মিত্রের পুনরুত্থান ব্যতিক্রম।
এই উপন্যাসটির সৃজনপর্ব নিয়ে কথাসাহিত্যিক অমর মিত্রের সঙ্গে গল্পপাঠ কথা বলেছে। তিনি তখন কোলকাতা থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য তৈরি হচ্ছেন। পরদিন ভোরে রওনা করবেন। এর মধ্যেই অমর মিত্র কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠিয়েছেন। হয়তো সময় পেলে আরো প্রশ্ন করা সম্ভব হতো। কয়েকজন কথাসাহিত্যিক পুনরুত্থান নিয়ে তাদের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছেন। এই উপন্যাসের শৈলী জানার জন্য এই লেখাগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি কোণ থেকে আলো ফেলা হয়েছে।

আমেরিকান দের কাছে এফ-ওয়ার্ড হোল– কাঁচা বাংলায় “খিস্তি সমূহ”। যার ব্যবহার সমাজ-আচার সাপেক্ষে বর্জনীয়। ফেমিনিজম– এই শব্দ ব্যাবহারকারীদের, নারীবাদী তাত্বিকদের ও নারীবাদ অভ্যাস করা মানুষজনকে মূলধারার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কোনো সহজ চোখে দেখেনা। নারীবাদ সম্পর্কে তাদের ধারণাও অস্পষ্ট। ফলে নানান মিসজিনি’র ধারা তৈরি হয়। মূলত অজ্ঞতার কারণে এরা নারীবাদ দেখলেই এড়িয়ে চলেন, এড়িয়ে চলেন নারীবাদীদেরও। নারীবাদীরা এই প্রবণতাকে কটাক্ষ করে ফেমিনিজমকে এফ- ওয়ার্ডের পান হিসেবে উল্লেখ করেন সময় সময়।

গল্পকার ঔপন্যাসিক হাসান আজিজুল হক নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন নবীন গল্পকার মেহেদী উল্লাহর সঙ্গে। মেহেদী উল্লাহ শক্তিশালী গল্পকার। তাঁর নিজের ভাবনাটি স্পষ্ট। ফলে এই প্রবীণ-নবীনের আলাপটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
: হাসান আজিজুল হক

সুবিমল মিশ্র কোথাও সাক্ষাৎকার দেন না। নিচে ইউটিউবে দেখুন তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার–
ধারাবাহিক উপন্যাস
অদিতার আঁধার : পর্ব–৭
দীপেন ভট্টাচার্য
———————————————————–
আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক– প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ

আছিয়া, অনগ্রসর সমাজের বাসিন্দা, মাংসল শরীরে ভর করেছে মধু, সে মধুর টানে অফিসের বস, গ্রামের চাচা আর বখাটেরা হাত বাড়িয়ে থাকে সবসময়। তারপর বিপত্তি, শরীরে বাসা বাঁধে কীটগুলোর বংশধর। এক অন্ধকার রাতে—যেদিন আকাশে চাঁদ ছিলো না কোথাও, কারা যেন মুখ চেপে ধরেছিল তারাদের, শহরের সবগুলো বাতি নিভে গিয়েছিল ক্লান্তিতে, যেদিন বৃষ্টি হবে বলে মেঘগুলো জমাট বেঁধে ঘন হয়ে আবার কি যেন ভেবে দুধের ছানা কাটার মতো ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীময়–সেদিন আলো খুঁজতে খুঁজতে নিরুদ্দেশ হলো আছিয়া।

রুশ সাহিত্যে পুশকিনের আসনের সঙ্গে তুলনীয় ইংরেজি সাহিত্যে শেক্সপীয়র, জর্মন সাহিত্যে গোয়টে ও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের আসন। তিনি মুলত কবি। কথা সাহিত্যেও তাঁর অবদান ছিল সমীহ করার মতো। মাত্র আটত্রিশ বৎসর আয়ুষ্কালে তিনি রুশ ভাষা ও সাহিত্যে একাধারে আধুনিক কাব্যভাষা, বাস্তববাদ, গদ্যকাহিনী, ট্রাজেডি, কাব্যনাট্য প্রভৃতির জনক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। স্টেশনের ডাকবাবু (১৮৩১) গল্পটি তার গল্পধারা “বেলকিনের গল্প”বইতে স্থান পেয়েছে। এটি মুলত ডাক-বাংলোর তত্বাবধায়ক ও তার মেয়ে দুনিয়ার গল্প। মুল রুশ থেকে গল্পটি অনুবাদ করেছেন ননী ভৌমিক।
আলেক্সান্দর পুশকিনের গল্প ; ষ্টেশনের ডাকবাবু
স্বকৃত নোমানের দুটি আয়োজন
এক সময়ে আমাদের দেশে পুরুষদের মধ্যে লুঙ্গি, তফন বা ধুতি মালকোছা মেরে পরার চল ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল গরীব মানুষ বছরে এক জোড়া লুঙ্গির বেশি কেনার সামর্থ তাদের ছিল না। জল-কাদায় কাজ করতে হলে মালকোছা না মেরে উপায় ছিল না। এটা ধীরে ধীরে এক সময় বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল।
স্বকৃত নোমান লিখেছেন সেই মালকোছা নিয়ে একটি গল্প। তবে গল্পটি সেকালের নয়–একালের। গল্পটিতে হাসান আজিজুল হকের নির্মেদ বিবরণী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কাৎলাহার বিলের পীরের মতো গ্রাম পাহারারত জাগ্রত পীর উঁকি দেন–তবে সেটা এই গল্পের চরিত্রকে একটি শক্ত পাটাতন দিয়েছে।

